# নিজস্ব প্রতিবেদক :-
সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ভাতা পাচ্ছেন সুস্থ মানুষেরা। এরকম অভিযোগ পাওয়া গেছে হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের অনেক প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে। এলাকার অনেক সুস্থ মানুষ ঘুষের বিনিময়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন। অথচ প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা সমাজসেবা অফিসে বার বার ঘুরেও সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব প্রতিবন্ধীর মধ্যে কেউ জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী, কেউ জন্মগত মানসিক প্রতিবন্ধী, আবার কেউ দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সরকার এখন প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা দিচ্ছে ৮৫০ টাকা করে।
১ মে সোমবার বিকালে গোবিন্দপুর বাজারে গেলে বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের দেখা হয়। এদের মধ্যে দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (৪৩) সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ বছর ধরে পঙ্গু। ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হয়। তিনি জানান, সমাজসেবা অফিসে ৫ দিন গিয়েছেন। কিন্তু কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। মধ্য গোবিন্দপুরের মানসিক প্রতিবন্ধী মতিউর রহমানের (৪৫) অবস্থাটা এমনই যে, তাকে বার বার জিজ্ঞাসা করার পরও বাবার নামটি বলতে পারেননি। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে আরও ছিলেন বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত সুরত আলীর ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফিরোজ উদ্দিন (৬৫), একই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী আজিজুল (৩৫), দক্ষিণ গোবিন্দপুরের আবু তাহের ভাÐারির ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী শাহীন মিয়া (২৮), একই গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী রাসেল (২০), মৃত মতিউর রহমানের ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হীরা মিয়া (১৮) ও একই গ্রামের জাহাঙ্গীরের ছেলে জন্মগত প্রতিবন্ধী আল আমিন (৬), বোয়ালিয়া গ্রামের হুমায়ুনের মেয়ে জন্মগত প্রতিবন্ধী মোবাশ্বিরা (৬) এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হাতের আঙ্গুল হারানো সিদলা সুরাটি গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে হাফিজা (৭)। এছাড়া আনুয়া গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফজলু মিয়া (৪৫) শয্যাশায়ী। এদের কেউই ভাতা পাচ্ছেন না। ঘুষ দিতে পারছেন না তাই ভাতা পাচ্ছেন না বলে এরা অভিযোগ করেছেন। তাদের মত এরকম আরও অনেক ভাতা বঞ্চিত প্রতিবন্ধী এলাকায় রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
তারা এই অনিয়মের সঙ্গে সমাজসেবা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর রাশেদুল হাসানসহ একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তবে রাশেদুল হাসান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকার গতবছর ১ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করার একটি সুযোগ দিয়েছিল। সরকারের টার্গেট ছিল ৩ লাখ মানুষকে ভাতা প্রদান। কিন্তু আবেদন পড়েছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার। তখন ১০ বছরের কম বয়সীদের বাদ দিতে হয়েছে। তবে গোবিন্দপুরের ১০ বছরের ওপরে যারা বাদ পড়েছেন, তারা অনলাইনে আবার আবেদন করতে পারবেন বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বলেছেন, সমাজসেবা অফিস থেকে কোন সুস্থ ব্যক্তি অনিয়মের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন কি না, এটা তাঁর জানা নেই। তবে যেসব প্রতিবন্ধী বিগত সময়ে আবেদন করেননি, তারা আগামীতে আবেদন করলে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান খানকে প্রশ্ন করলে বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষার সনদ দেখে তবেই প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়। এর পরও যদি কেউ অনিয়মের মাধ্যমে ভাতা নিয়ে থাকেন, সেটি প্রমাণিত হলে ভাতা বাতিলও করা যাবে। তিনি বলেন, সরকার আবারও নতুন ভাতাভোগীর তালিকা প্রস্তুতের অনুমতি দিলে বঞ্চিতরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তখন আবেদনগুলি বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।